"শেষবার, মাস খানেক আগে হুগলির একটা ঘাটে গঙ্গাস্নান করে নৌকোয় ওপারে যাবার সময় বুঝতে পারলাম, ডুব দিয়ে স্নান করলে দেহমন এমন সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়, সেই অভিভূত অবস্থা উপভোগ করা ব্যতীত অন্য কোনো কাজ সাধারণভাবে মনের জন্য অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু এই যে এখন শুধু দু পা জলে ডুবিয়ে বসে আছি, এতে করে কীভাবে শৈত্য ধীরে সমগ্র শরীরে ব্যাপ্ত হচ্ছে, তা শান্তভাবে বুঝতে পারছি। পা-দুটি ছাড়া অবশিষ্ট শুকনো শরীরও কীভাবে শৈত্যের আওতায় এসে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, তা খেয়াল করলে বিস্ময় জাগে। প্রভাব পড়ছে দুই চোখে, চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছে। পেশির নিচে এক-একটি বক্ররেখা জেগে উঠে, মিলিয়ে গিয়ে, আবার জেগে উঠে মিলিত হচ্ছে যখন, সেই পুঞ্জিভূত শৈত্য মস্তিষ্কে তরঙ্গ পাঠিয়ে দিচ্ছে। শুধু দুই পা মগ্ন যে-জলে, অনতি বিলম্বেই সে ক্রিয়া করছে আরও আরও দূরে। এই শরীরের সব অবলম্বন এখন জল। জলই তার রক্ত, মাংস, মজ্জা। স্নায়ুগুলো সব জলেরই রেখা। ওইটুকু সান্নিধ্যই ক্রমে জলকে আহ্বান করে নিয়ে এল উঠোন থেকে ভিতরঘরে। দু-কূলপ্লাবী হয়ে সে তখন সব নিমজ্জিত করছে। চোখ বন্ধ করি। শেষে নাসারন্ধ পর্যন্ত নিমজ্জিত হলে মস্তিষ্কে তিক্ষ্ণ যন্ত্রণা হতে হতে একসময় আর-কিছু নেই হয়তো বা। অথবা কী আছে, কী নেই, তা অবান্তর।"
চিরন্তন সরকার, ‘শরীরের সংস্কৃতি সংস্কৃতির সংস্কৃতির শরীর’, অবভাস।
চিরন্তন সরকার আসাননগর মদন মোহন তর্কালংকার কলেজে ইংরাজি পড়ান।
বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন https://www.ababhashbooks.com/sharier-sanskriti-sanskritir-sharir.html