ABABHASH A Kolkata-based Publisher in the Business of Ideas

Recently added item(s) ×

You have no items in your shopping cart.

সাতগাঁর

শাকম্ভরী দেবী কাশীবাসী হবার প্রায় সাত মাস পরে সকালের স্নানে গিয়ে ওঁর কন্ঠস্বর শুনলেন সরোজা। তার কিছুদিন আগে থেকেই ভাঁড়ার ঘরে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছিল, কিন্তু পুরোনো কাঠের ইঁদুরকলটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেদিন ভাটার সময় গলা জলে নেমে ডুব দিয়ে সরোজা অজস্র কথার কলকলানি খলবলানির ভেতর স্পষ্ট শুনলেন বৃদ্ধার কন্ঠস্বর। অন্তর্জলীযাত্রা থেকে বাড়ি ফিরে যেমন ক্ষীণ আর জড়ানো হয়ে গিয়েছিল তার থেকে ঢের স্পষ্ট, আগের মতো, সরাসরি সরোজাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন ---

'ইঁদুরকলটা তো বিশে ঠাকুরবাড়ি নিয়ে গেছিল নৈবিদ্যির নাড়ু ইঁদুরে ঠুকরোচ্ছে বলে, সেই চোতমাসে। ওটা ভোগের ঘরেই পড়ে আছে।'

সেদিন থেকে শুরু হল। এবং যে  সরোজা কলকাতা থেকে ফেরার পর শাকম্ভরী দেবী তৃতীয় কোনো মানুষ সামনে না থাকলে দরজার চৌকাঠ, তুলসীমঞ্চ, কুয়ো বা নিদেনপক্ষে দেয়ালের মধ্যস্থতা ছাড়া বাক্যালাপ করতেন না, সেই তিনি নিয়মিত জলে-জলে পাঁচশো মাইল দূর থেকে বার্তাবিনিময় করতে লাগলেন, খুঁটিনাটি সাংসারিক বিষয়ে উপদেশ দিতে লাগলেন, কারোর অসুখবিসুখ করলে পথ্যের নির্দেশ দিতে লাগলেন, নতুনবউয়ের পেটের ছানার জন্য কাঁথা বোনার কথা, বয়ামে গ্রীষ্মের আমসত্ত্ব কাসুন্দি ভাদ্রের কড়া রোদ খাওয়ানোর কথা মনে করিয়ে দিতে লাগলেন। ঠিক সেই আগের মতোই। 

পিসিশাশুড়ির কাছে কিছু জানতে চাওয়ার থাকলে, কিংবা জানানোর থাকলে, সরোজা ভরা জোয়ারে গিয়ে বলে আসতেন। বিকেলের ভাটায় কিংবা পরদিন সকালে ঠিক জবাব আসত, শাকম্ভরী দেবী কেদারঘাটে গঙ্গাস্নানে না গেলেও আসত। বহুকাল আগে তাঁর যৌবনে শ্বশুরালয় থেকে চলে আসার পর মাঝরাতে পাঁচিলের ওপার থেকে নিউরোসিফিলিসে আক্রান্ত মথুরের কাতর যৌনমিলনের আকুতি তাঁর কানে চুঁইয়ে আসত যেভাবে, সেভাবেই মুক্তিভবনে পানিপাঁড়ের টানা গঙ্গাজলের ঘড়ায় তিনি শুনতে পেতেন সরোজার গলা।

সরোজা তাঁর স্নানসঙ্গী গঙ্গাজলদের শিখিয়ে দেবার পর এই নিয়ে কারোর কোনোরকম বিষ্ময় ছিল না। তাঁরাও কেউ কেউ এভাবে দূরবর্তিনী আত্মীয়ার সঙ্গে জলে-জলে বার্তালাপ করতেন। কোন বারে কী খেতে নেই, কোন রান্নায় কী ফোড়ন বিধেয়, কোন রোগের কোন টোটকা, বাড়ির বিবাহযোগ্যার রাজযোটক পাত্র কোথাকার কোন পালটি-ঘরে আছে, এইসব নানান বিষয়ে তাঁরা শলাপরামর্শ করতেন। তাঁদেরও কারোর শাশুড়ি খুড়শাশুড়ি পিসশাশুড়ি কাশীবাসী হয়েছিলেন। বাংলার আদিরাম প্রেসের পাঁজির সঙ্গে কাশীর পঞ্চাঙ্গ পাঁজির নিত্যকর্ম বিধিনিষেধ যেমন মিলিয়ে নেওয়া হতো, তেমনই সাতগাঁর নিত্যকার সাংসারিক বচসা --— যাকে বাড়ির পুরুষেরা বলে ‘হাঁড়িকুড়ি ঠোকাঠুকির ঝনঝনাৎকার’ --- চলত জলে-জলে জোয়ারভাটায়, কখনো এমনকি সপ্তমেও চড়ত। কিন্তু মুখোমুখি ঝগড়ায়  ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে বউরা যেমন মেঝেয় পা ঠুকে মল বাজিয়ে সোচ্চারে বা নিরুচ্চারে শাশুড়ির মৃত্যুকামনা করত --— ‘মর বুড়ি! তুই মর! মরলে গা জুড়োয়!’— কাশীবাসীকে তো আর সেটা বলা চলে না। তার কারণ সেটা যে হয়ে উঠবে মোক্ষলাভের শুভেচ্ছা! তাই জলে ডুব দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলত --—

‘বুড়ি তুই আরও অনেককাল বেঁচে থাক! ঝাড়েবংশে মরে হেজে মজে যাক, তুই শুধু গাছপাথরের মতো দেখে যা!’

 বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন

 

 

 

Leave a Reply

Sorry, you must be logged in to post a comment.