ABABHASH A Kolkata-based Publisher in the Business of Ideas

Recently added item(s) ×

You have no items in your shopping cart.

'জীবনের অন্যন্য ও কবিতা’ দেবারতি মিত্র

“… মানুষের বিপন্নতা দেখে দেখে আমি একটা জীবনের কথা প্রায়ই ভাবি, সেখানে পৃথিবীতে শুধু সাদা সাদা বহুতল ছায়া পিছলানো বাড়ি। পরিষ্কার রাস্তা ম্যাপের মতো আঁকা। সেইসব বাড়ির কোনোটা আন্তর্জাতিক বইয়ে ঠাসা লাইব্রেরি, কোনোটা খাবার তৈরির জায়গা, কোনোটা বা মানুষের জন্মাবার ও নিরাময়ের হাসপাতাল। আর অন্য বাড়িগুলোতে থাকে মানুষ। তাদের কারুর সঙ্গে কারুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই, অথচ প্রত্যেকে প্রত্যকের উপর প্রীত। তাঁরা কেউ চাষ করেন, কেউ কলকারখানায় কাজ করেন, কেউ ডাক্তারি, কেউ অধ্যাপনা করেন, কেউ বা নর্দমা পরিষ্কার করেন। যে-যাঁর কাজ সেরে ফিরে আসেন-- তারপর কেউ লাইব্রেরীতে কাটান, কেউ গান করেন, কেউ খেলাধুলা করেন, কেউ পাশের সমুদ্রে বা নদীতে ছোট নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পুরুষ ও নারীর জীবন একই রকম অবাধ। মিলনের দরকার হলে একে অন্যকে ডেকে নিতে পারেন, কারুর স্বাধীন ইচ্ছায় ব্যাঘত না-ঘটিয়ে। মনোরম আলাদা বাড়ি আছে তার জন্যে। সন্তান হলে সঙ্গে সঙ্গে তার মার কাছ থেকে অন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে মা-বাবা নিজের সন্তানকে কিছুতেই না-চিনতে পারেন। কেবল একটি বা দুটি মাত্র শিশুর জন্যে সমস্ত উদ্বেগ, অর্থ ব্যয় ও অন্যকে বঞ্চনা করবার অন্যায় থেকে যেন তাঁরা চিরকালের মতো মুক্তি পান। পৃথিবীসুদ্ধু শিশু যেন পিতৃস্নেহ মাতৃদুগ্ধ পায়। একচক্ষু কুবেরের যখ হয়ে থাকার চেয়ে এই বন্ধনহীন, স্বার্থহীন, প্রাচীরহীন বসবাস কি স্বাস্থ্যকর ও লোভনীয় নয়? দু-একবার বিশাল সাদা বাড়ির দরজাও খুলে গেছে আমার জন্যে, অবশ্য স্বপ্নে।  

     প্রাসঙ্গিক মনে হল তাই একটা অদ্ভুত কথা এখানে বলছি। ঠিক হিন্দুদের মতো নয়, আবার অনেকটাই হিন্দুদের মতো মেক্সিকোর ইয়াকি ইন্ডিয়ানদের যোগীরা স্পষ্ট দেখতে পান: মানুষের বাস্তব দেহ জ্যোতিষ্মান, ডিমের মতো তার আকার, আর হলদে আলোর টানটান তন্তু দিয়ে তৈরি সেই ডিম। সন্তান হলে মা এবং বাবা তাদের সহজাত পূর্ণতা থেকে ভ্রষ্ট হয়— তখন তাদের ওই আলোময় ডিম-শরীরে, যেখানে নাভিমূল থাকার কথা সেখানে, কালো গর্ত হয়ে যায়। যত বেশি সন্তান তত বড় গর্ত। শেষটায় আলোর ডিমটি দু’আধখানা হয়ে হাঁটাচলা করে, মাঝখানে কিছু নেই, শুধু কালো অন্ধকারে ভয়াবহ পোঁচ। ওই রন্ধ দিয়ে সন্তান-মা-বাবাকে ফোঁপরা করে নেয়। এইরকম ফাঁপা হয়ে যাওয়া মানুষ কোনো গভীর বিষয়ে ধারণা করতে পারে না। তা হলে সে কি চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত? না। নিজের সন্তানের সঙ্গে প্রোথিত মায়ার সম্পর্ক ছিঁড়ে ফেলে যদি সে পৃথিবীর সব শিশুকে সমান ভালোবাসে তবেই  তার ডিম-শরীরের অন্ধকার গর্ত ক্রমশ ভরাট হয়ে যাবে, ফিরে আসবে অগেকার ঔজ্জ্বল্য ও নবীনতা। কিন্তু তারপরও থাকে সে নিজে। থাকে তার নিজস্ব আকৃতির সংস্কার। ক্রমশ সেই বন্ধনও লুপ্ত করে সে চলে যেতে পারে আকারবিহীনতায়।…”  

দেবারতি মিত্র  ‘ গদ্য সংগ্রহ'-১।  অবভাস।

দেবারতি মিত্র, কবি ও গদ্যশিল্পী। আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।  

বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন https://www.ababhashbooks.com/gadyasangraha-28.html

Leave a Reply

Sorry, you must be logged in to post a comment.